‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের বড় প্রশ্ন ও তার যথাযথ উত্তর

১। “শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন।” – কোন্‌ মুহূর্তটিকে দুঃখের বলা হয়েছে ? তপনের  কাছে মুহূর্তটি দুঃখের বলে মনে হয়েছে কেন ? তপন কী সংকল্প করেছিল ? ১ + ২ + ২

  • প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী বিরচিত ‘কুমকুম’ গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত হয়েছে।
  • তপনের লেখা প্রথম গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সেই গল্পটি ছাপার ক্ষেত্রে বাড়ির লোক তপনের কথা বললেও নতুন মেসোর মহত্ত্বের কথাই বেশি করে বলছিল। নতুন মেসো ‘কারেকশান’ করে দিয়েছিলেন, তাঁরই জন্য গল্পটি ছাপানো হয়েছে সেসব কথা তপনের মনকে বারবার আহত করছিল। সেই মুহূর্তটিকে দুঃখের বলা হয়েছে।
  • নতুন সৃষ্টি স্রষ্টার মনে এক অভূতপূর্ব আনন্দ দেয়। তা কেবল অনুভূতিতেই ধরা পড়ে। তপন তার প্রথম লেখা গল্প পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে জেনে সেই আনন্দেরই অংশীদার হতে চেয়েছিল। মায়ের আদেশে নিজের লেখা গল্পটি পড়তে গিয়ে তাই লজ্জাও পেয়েছিল। কিন্তু সে যখন পড়তে গিয়ে দেখল তার লেখা গল্পটি মেসোমশাই ‘কারেকশান’ করার নামে প্রায় সম্পূর্ণই বদলে দিয়েছেন, তাতে তার লেখকসত্তা অত্যন্ত আহত হয়েছিল। গল্পটি প্রথম বা কাঁচা হাতের যাই হোক, স্রষ্টার কাছে তা-অনেক বড়ো। নতুন মেসো কিশোর তপনের সেই মনটাকেই গুরুত্ব দেননি। তপন কিন্তু মেসোমশাইয়ের কাজটিকে মানতে পারেনি। বরং হৃদয়-মনে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল। স্বরচিত গল্প পাঠের যে আনন্দ, অনুভূতি ও উচ্ছ্বাস তা তপন পায়নি। তাই তার মুহূর্তটি দুঃখের বলে মনে হয়েছিল।
  • তপন মায়ের আদেশে ও তীব্র ধমকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গল্পটি পড়তে বাধ্য হয়। তবে সে তার মনকে শক্ত করে একটা দৃঢ় সংকল্প করে যে, তার লেখা যদি কখনো ছাপাতে দেয় তাহলে সে নিজে গিয়ে দেবে। তাতে কেউ মনে করলে গল্প ছাপাতে পারে বা নাও পারে, তাতে তার কিছু যায় আসবে না। অন্তত তাকে আর কখনো শুনতে হবে না যে, অপর কেউ তার গল্পটি ছাপিয়ে দিয়েছে বা মনের সমস্ত কষ্ট চেপে রেখে অন্যের লেখা লাইন আর তাকে পড়তে হবে না।

২। “তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন” – ‘আজ’ বলতে কোন্ দিনটির কথা বলা হয়েছে ? তপনের কাছে দিনটি সবচেয়ে দুঃখের ছিল কেন ? ১ + ৪

  • কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত।
  • ‘আজ’ বলতে যেদিন তপনের ছোটোমাসি ও মেসো ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার একটি সংস্করণ সঙ্গে নিয়ে তপনের বাড়িতে এসেছিলেন, সেই দিনটির কথা এখানে বলা হয়েছে।
  • তপনের প্রথম লেখা গল্পটি নতুন মেসোমশাই ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করবেন বলেছিলেন। তপন অত্যন্ত খুশি হয়েছিল মেসোমশাইয়ের এই কথায়। তবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলেও তপন তার গল্প ছাপানোর খোঁজ না পেয়ে প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছিল। এমন সময় একদিন তার বাড়িতে পৌঁছান নতুন মেসো ও ছোটোমাসি।
  • তাঁদের সঙ্গে ছিল ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার একটি সংখ্যা। সেই পত্রিকাটিতেই তপনের লেখা ‘প্রথম দিন’ গল্পটি তার নামে ছাপানো অবস্থায় প্রকাশিত হয়েছিল। সারা বাড়ির লোক শুধু তপনের কথা আর নতুন মেসোমশাইয়ের মহত্ত্বের কথা বলতে থাকে। এত আনন্দের মাঝে ‘কারেকশান’ করে দেওয়ার কথাটা এতটাই চর্চিত হচ্ছিল যার জন্য তপন কিছুতেই তার সৃষ্টির আনন্দটা অনুভব করতে পারছিল না। এমন সময় তপনের মা গল্পটা জোরে তপনকে পড়ে শোনাতে বলেন। তপন প্রথমটা লজ্জা পেলেও পরে মায়ের কথায় গল্পটি পড়তে শুরু করে। কিন্তু গল্পটা পড়তে গিয়ে তপন অত্যন্ত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। কারণ নতুন মেসো গল্পটা ‘কারেকশান’ করতে গিয়ে প্রায় সম্পূর্ণই নতুন করে লিখে দিয়েছিলেন। তাই গল্পটা তপনের কাছে আনকোরা ও অপরিচিত লাগছিল। সে মনের দিক থেকে এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে, গল্পটা পড়তেই পারছিল না, বোবা হয়ে গিয়েছিল। মনের দুঃখ নিজের মনে রেখে সবার অলক্ষে চোখের জল ফেলছিল। তাই তপনের কাছে দিনটি ছিল সবচেয়ে দুঃখের।

৩। “এর প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা, তপনের অপরিচিত” – ‘এর’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? উদ্ধৃতাংশের বিষয়টি পরিস্ফুট করো। ১ + ৪

অথবা,

   “তপন আর পড়তে পারে না। বোবার মতো বসে থাকে” – তপনের এরূপ অবস্থার কারণটি আলোচনা করো। ৫

  • কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত।
  • উদ্ধৃতাংশে ‘এর’ বলতে কিশোর তপনের লেখা প্রথম গল্পের কথা বলা হয়েছে। ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পটির নাম ছিল ‘প্রথম দিন’।
  • কিশোর তপনের কাছে লেখকদের সম্পর্কে এক অদ্ভুত ধারণা ছিল। সে ভাবত লেখকরা সম্পূর্ণ আলাদা এক জগতের মানুষ; এমনকি তাদের বুঝি দেখাও যায় না। সে ধারণা ভাঙে তার নতুন মেসোকে দেখে। কারণ তিনি প্রফেসর হলেও লেখক। তাঁর অনেক বই ছাপা হয়ে বেরিয়েছে।
    • ‘নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের।’
  • তপন মেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। সেদিন দুপুরবেলাতেই একাসনে বসে একটি গল্প লিখে ফেলে তপন। গল্পটি লেখা শেষ হলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে রোমাঞ্চিত হয়। সেই গল্পের কথা তপন প্রথম জানায় চিরকালের বন্ধু ছোটোমাসিকে। মাসিও, গল্পটি নিয়ে পৌঁছে দেয় নতুন মেসোর কাছে। নতুন মেসো গল্পটি পড়ে তপনের প্রশংসা করে। একটু ‘কারেকশান’ করে দিলে ছাপানোও যাবে। মেসোর কথার সঙ্গে মাসিও গল্পটি ছাপিয়ে দেওয়ার কথা বলে। বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হলে, বলা যায় তপন যখন গল্প ছাপানোর বিষয় আশাহত তখন একদিন মেসো ও মাসি তপনের বাড়িতে হাজির। সঙ্গে ছিল ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা। তাতেই ছিল তপনের নামে ছাপানো গল্প ‘প্রথম দিন’। তপনের বাড়ির সবাই তো আনন্দে মুখর। তপনের প্রশংসা, মেসোর মহত্ত্বের কথা মুখে মুখে আলোচিত। তখন মায়ের আদেশে তপন তার লেখা গল্প পড়তে গিয়ে থমকে যায়। বোবার মতো বসে থাকে। সে দেখে তার গল্পটা মেসো কারেকশান করতে গিয়ে সবটাই প্রায় নতুন করে লিখে দিয়েছেন। তাই তপনের কাছে নিজের লেখা গল্পটা আনকোরা, অপরিচিত লাগছিল। কিশোর তপনের মনটা এই ঘটনায় ব্যথিত, অপমানিত। কিশোর মনে এ ব্যথা চিরকালীন দাগ কেটে দিল।

৪। “গল্প ছাপা হলে যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হবার কথা সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।” – আলোচ্য অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কার আহ্লাদ খুঁজে পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু খুঁজে পাওয়া গেল না কেন?  ১ +8

  • আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
  • তপনের নামে সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তপনের লেখা গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে প্রকাশ পেয়েছে। তপনের কাছে মনে হয়েছে –
    • ‘জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন’।
  • আবার কখনো মনে হয়েছে
    • ‘পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে!”
  • কিন্তু এটা তো সত্যি পত্রিকার সূচিপত্রে লেখা ছিল ‘প্রথম দিন’ (গল্প) – শ্রীতপন কুমার রায়। তপনের লেখা গল্প এখন হাজার হাজার ছেলেমেয়ের হাতে ঘুরবে। সবাই প্রশংসা করবে, আর বলবে ‘বারে চমৎকার লিখেছে তো!’ তার মেসোমশাই একটু মৃদু হাসেন এবং বলেন ‘একটু-আধটু ‘কারেকশান’ করতে হয়েছে অবশ্য। নেহাৎ কাঁচা হাত তো?’ ছোটোমাসি ‘তা হোক’ বলে উড়িয়ে দিলেও ‘কারেকশান’ করার কথাটা ছড়িয়ে পড়ে। তপনের বাবাও একসময় মন্তব্য করেন,
    • “তাই। তা নইলে ফট করে একটা লিখল; আর ছাপা হলো-’।
  • মেজোকাকু বলেন,
    • “তা ও রকম একটি লেখক মেসো থাকা মন্দ নয়। আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম।’
  • ছোটোমাসি আত্মপ্রসাদের প্রসন্নতায় ডিমভাজা আর চা খেলেও তপন কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তার মনে যে ভয়ংকর আহ্লাদ বা আনন্দ হওয়ার কথা তা হচ্ছিল না। ‘কারেকশান’ করার কথাতে যেন সব কিছু চাপা পড়ে যায়। তাই তপনের অন্তদর্শন ঘটে। গল্প ছাপা হলেও যে আনন্দ-আহ্লাদ হওয়ার কথা তা তপনের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না।

৫। “সত্যিই তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি এল আজ” – উদ্ধৃতাংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ? তপনের সবচেয়ে সুখের দিনটি কী ছিল বিবৃত করো। ১+৪

অথবা

   “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে ?” – উদ্ধৃতাংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ? কোন্ ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে বিবৃত করো।

  • কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক ছোটো গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি আহৃত।
  • তপনের লেখা গল্পটি নতুন ছোটো মেসোমশাই নিয়ে গিয়েছিলেন। তপনকে এবং ছোটোমাসিকে বলেছিলেন গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদককে বলে ছাপানোর ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন চলে গেলও সেই ছাপানো প্রসঙ্গে কোনো খবর তপনের কাছে পৌঁছায়নি। তাই তপন তার প্রথম গল্প ছাপানো প্রসঙ্গে প্রায় আশাহত হয়ে বিষণ্ণ মনে দিন কাটাচ্ছিল। এদিকে প্রথম গল্প ছাপা না হলেও তপন আরও দু-তিনটে গল্প লিখে শেষ করেছিল। গল্প লেখা যেন তার কাছে নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল।
  • তারপরই তপনের জীবনে এক ঘটনা ঘটে। হঠাৎ তার বাড়িতে বেড়াতে আসেন ছোটো মেসোমশাই ও ছোটোমাসি। সঙ্গে আবার ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার একটি সংখ্যা। তপনের চোখে পড়ে সেটি। বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের। তাহলে কি তার এতদিন পরে জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি ফিলে এল? সত্যিই কি তপনের লেখা গল্প ছাপানো হরফে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের হাতে ঘুরবে? এ কথা ভেবে তপন পুলকিত হয়। তার কাছে মনে হয় এ যেন পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া এক অলৌকিক ঘটনা। পত্রিকার সূচিপত্রে নাম জ্বলজ্বল করছে। লেখা রয়েছে ‘প্রথম দিন’ (গল্প) শ্রীতপন কুমার রায়। সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। পত্রিকাটি এক হাত থেকে অন্য হাতে ঘুরতে থাকে। তপনের গল্প ছাপা হয়েছে।

৬। “তপন লজ্জা ভেঙে পড়তে যায়” – তপনের লজ্জা পাওয়ার কারণ কী? তপন পড়তে গিয়ে কোন্ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল ? ৩ +২

  • আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত।
  • তপন তার জীবনের প্রথম লেখা গল্পটি কিশোর মনের সমস্ত অনুরাগ দিয়ে লিখেছিল। নতুন মেসো তপনকে উৎসাহ দিতে গল্পের প্রশংসা করে ছাপানোর ব্যবস্থা করবেন বলেছিলেন। সেদিন ছোটোমাসি ও মেসো ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকাটি নিয়ে তপনের বাড়ি এসে পৌঁছেছিলেন। যে পত্রিকাটিতে তপনের ‘প্রথম দিন’ শীর্ষক গল্পটি মুদ্রিত ছিল, তপনের বাড়ির লোকেরা তো আনন্দে পত্রিকাটি দেখতে থাকে এবং বলে,

‘বারে, চমৎকার লিখেছে তো!’

সবার মুখে তপনের গল্পের কথা আর মেসোর মহত্ত্বের কথা। এক সময় তপনের মা তপনকে গল্পটি পড়তে বলেন। তপন নিজের লেখা গল্পটি পড়ে শোনাবে। স্বাভাবিকভাবে মনে মনে তপন তখন আনন্দ-উত্তেজনা-লজ্জা সমস্ত রকম অনুভূতির রসে সিক্ত ছিল। তাই সে লজ্জা পেয়েছিল।

  • তপনের জীবনের প্রথম লেখা গল্প ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত। এক অদ্ভুত আনন্দানুভূতি জাগছিল মনে। আনন্দে যেমন মানুষ বাকহারা হয়, তপনেরও তেমনি গলাটা ধরে গিয়েছিল। তাই কেশে গলাটা পরিষ্কার করে সে তার লেখা গল্পটি পড়া শুরু করে। কিন্তু পড়তে গিয়েই তপন থমকে যায়। সে যেন সবই অচেনা কোনো গল্প পড়ছে, তার কাছে গল্পের ‘প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা’, অপরিচিত’ মনে হচ্ছিল। তপন বুঝে উঠতে পারছিল না গল্পটা কার লেখা। সে তো পড়ে যাওয়া গল্পটি লেখেনি। এক অদ্ভুত বেদনাময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল তপন। সে গল্পটা পড়তেই পারছিল না। বোবার মতো বসেছিল।

৭। “এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা।” – ‘এমন সময়’ বলতে কোন্‌ সময়ের কথা বলা হয়েছে? কোন্‌ ঘটনা ঘটেছিল তা বিবৃত করো। ৩ + ২

  • কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত।
  • তপনের গল্প সম্পর্কে লেখক নতুন ছোটো মেসোমশাই প্রশংসা করেছিলেন। এতে তপনের গল্প লেখার ইচ্ছা অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাড়ির লোক ঠাট্টা-তামাশা করে তপনকে নিয়ে। বাড়ির লোক তো তপনকে কবি, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী বলে ডাকে। তবে তপন কারো কথায় কান দেয় না। সে বাড়ির লোকের ঠাট্টা-তামাশার মধ্যেও দু-তিনটে গল্প লিখে ফেলেছিল। এমনকি হোমটাস্কের কাজ না করেও লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প লিখছিল। যেন নেশার মতো হয়ে গিয়েছে।
  • তপনের গরমের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনার চাপ বাড়ছিল। রীতিমতো পড়াশোনা করতে হচ্ছিল। তার মধ্যে প্রথম লেখাটা মেসোকে দেওয়ার পর ছাপানোর কোনো খবর পাচ্ছিল না। মনে জন্মেছিল এক বিষণ্ণতা। সেই বিষণ্ণতার জন্যে একটি ঘটনা ঘটেছিল। এখানে ‘এমন সময়’ বলতে মনের বিষণ্ণ অবস্থার কথা বলা হয়েছে।
  • তপনের বাড়িতে হঠাৎ একদিন ছোটোমাসি ও ছোটো মেসো বেড়াতে আসেন। মেসোর হাতে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার একটি সংখ্যা। সেই পত্রিকা দেখে তপনের বুকের রক্ত ছলকে উঠে। তপন ভাবে তাহলে কি সত্যিই তার এতদিনের পর জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি উপস্থিত? তার লেখা গল্প হাজার হাজার ছেলেমেয়ের হাতে ঘুরবে? এ-তো এক অলৌকিক ঘটনা। তপনের লেখা গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল। এখানে সেই ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

৮। “… ভয়ানক আনন্দের খবরটা ছোটোমাসিকে সর্বাগ্রে দিয়ে বসে”– ভয়ানক আনন্দে কোন খবর, কে, কেন ছোটোমাসিকে দিয়েছিল? এরপর ছোটোমাসির প্রতিক্রিয়া কী ছিল ? ৩ + ২

  • কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্পের উদ্ধৃতাংশের আনন্দের খবরটি তপন দিয়েছিল তার ছোটোমাসিকে।
  • তপন তার সমবয়সি ছেলেমেয়েদের ভাবনা ও প্রকৃতি থেকে ভিন্ন, তাই তো সে গল্প শুনতে ভালোবাসে, পড়তে ভালোবাসে। তারপর নতুন লেখক ছোটো মেসোমশাইকে নিজের চোখে দেখে তার ধারণাই পালটে গিয়েছিল। লেখকরাও যে সহজ মানুষের মতো, তা জেনে তপনের মনে লেখার প্রেরণা জাগে অনেকটাই। তাই সেদিন দুপুরের নিরালা পরিবেশ পেয়ে তিন তলার সিঁড়িতে উঠে গিয়ে একাসনে বসেই একটা গল্প লিখে ফেলে। গল্পটা নিজে পড়ে মনে করে সত্যিই সে একটা গল্প লিখে ফেলেছে। যার জন্য সে মনে মনে এক অব্যক্ত উত্তেজনাও অনুভব করে। সেই উত্তেজনার ভয়ানক আনন্দের খবরটাই ছোটোমাসিকে দিয়েছিল তপন। কারণ ছোটোমাসিই তার চিরকালের বন্ধু। মামার বাড়িতে এসে সব কিছুর আবদার ছোটোমাসির কাছে। তাই আনন্দের খবরটা ছোটোমাসিকেই সর্বাগ্রে দিয়েছিল।
  • তপনের লেখা গল্পটা হাতে পেয়ে ছোটোমাসিও খুব আনন্দিত হয়েছিল। স্বামী যেহেতু লেখক মানুষ তাই তাঁকে গল্পটা দেখানোর একটা তাগিদ ছিল। তবে গল্পটা নিয়ে ছোটোমাসি তপনের সঙ্গে একটু রহস্য করেছিল। মাসি বলেছিল যে, সে গল্পটা ভালোই লিখেছে, তবে কোনোখান থেকে নকল করেনি তো? মাসির কথায় একটু রেগে যায় তপন। মাসি আবার বলে যে, সে রেগে যাচ্ছে কেন? শুধু তো তাকে জিজ্ঞাসা করেছে। তারপর মাসি তপনকে একটু অপেক্ষা করতে বলে গল্পটা মেসোর হাতে তুলে দেয়।

৯। “হঠাৎ ভয়ানক একটা উত্তেজনা অনুভব করে তপন” – উদ্ধৃতাংশটির উৎস লেখো। তপনের উত্তেজনা অনুভব করার কারণ কী ? তপন এরপর কী করেছিল ? ১+৩+১

  • কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি আহৃত।
  • নতুন মেসোমশাই তপনের গল্প নিয়ে যাওয়ায় তপন খুবই খুশি মনে দিন কাটাচ্ছিল। সে নিজেকে কৃতার্থ বা সফল একজন ভেবে দিন কাটাচ্ছিল। তারপর সে একদিন দুপুরবেলা নিস্তব্ধ নিরালা পরিবেশে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে গিয়ে একাসনে বসে একটা নতুন গল্প লিখে ফেলে। নিজের লেখা গল্প পড়ে নিজেই বিস্মিত হয়। পড়ে ভাবে সে তো হুবহু একটা গল্প লিখে ফেলেছে। কারণ রাশি রাশি গল্প শুনে বা পড়ে গল্প জিনিসটা সম্পর্কে তার জানা হয়ে গিয়েছিল। তাই আজ সে অল্প সময়ে একটা গল্প লিখে মনে মনে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এই গল্প লেখার জন্য তার মনে একটি উত্তেজনা অনুভূত হয়।
  • তপন গল্পটি লেখার পর এতটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল যে, নিজের লেখা গল্পটা কাউকে না দেখালে মনকে শান্ত করতে পারছিল না। তাই তপনের মনের কোণে একটা মুখই ভেসে উঠছিল, সেটা হল ছোটোমাসির। কারণ ছোটোমাসি বছর আষ্টেকের মতো বড়ো হলেও সে সমবয়সির মতো। ছোটোমাসিই তার চিরকালের বন্ধু। মার্মার বাড়ি এলে ছোটোমাসির কাছেই তার সব কিছুর আবদার বা মনের কথার অংশীদার হওয়ার মানুষ। তাই তপন তিনতলার সিঁড়ি থেকে দুদ্দাড়িয়ে নেমে এসে গল্প লেখার ভয়ানক আনন্দের খবরটা সর্বাগ্রে ছোটোমাসিকেই দেয়। সে বলে, ‘ছোটোমাসি, একটা গল্প লিখেছি।’

১০। “তবে আর পায় কে তপনকে।” – উদ্ধৃতাংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? তপনের মনের এরূপ অনুভূতির কারণ কী? সে এরপর কী করেছিল ? ১+৩+১

  • উদ্ধৃতাংশটি কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
  • তপনের নতুন ছোটো মেসোমশাই একজন লেখক। লেখক সম্পর্কে তপনের ধারণা ছিল অজানা। মেসোমশাইকে দেখে লেখক সম্পর্কে ধারণা পালটে ছিল। মেসোমশাই তপনের লেখা গল্পটি পড়েছিলেন। বাড়ির সবাই তপনের গল্প ছাপানো নিয়ে হাসাহাসি করলেও মেসোমশাই কিন্তু তপনের গল্প সম্পর্কে প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “না-না আমি বলছি —তপনের হাত আছে। চোখও আছে।” মেসোমশাইয়ের কথায় তপন মনে জোর পেয়েছিল। নিজের প্রতি আস্থাও বেড়েছিল। মেসো আবার তার গল্পটি ছাপানোর জন্য নিয়ে ও গিয়েছিলেন। বিশেষত লেখকরা যখন সহজ মানুষের মতোই হয়ে থাকেন তাহলে তপনের পক্ষে গল্প লেখা তো অসম্ভব কোনো কাজ হবে না। তাই তপনের মনে এরূপ অনুভূতি হয়েছিল ৷
  • তপন মেসোমশাইয়ের কথায় নিজের দক্ষতার প্রতি আস্থা অর্জন করে কিছু একটা করার কথা ভাবছিল। তাই সে সেদিন দুপুরবেলা বাড়িতে যখন নিস্তব্ধ পরিবেশ তখন হোমটাস্কের খাতা ও কলম নিয়ে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে গেল এবং একাসনে বসে একটি সম্পূর্ণ গল্প লিখে ফেলল। এমনকি নিজের লেখা গল্প পড়ে তপনেরই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল, মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠল। ভাবতেই পারছে না যে সে একটা গল্প লিখে ফেলেছে।

১১। “বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা” –  বিকেলে চায়ের টেবিলে কোন্ কথা ওঠে? সেই কথার প্রতিক্রিয়া কী ছিল? ২ + ৩

  • আলোচ্য অংশটি কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
  • তপনের লেখা গল্পটা ছোটোমাসি পৌঁছে দিয়েছিল নতুন মেসোর হাতে। নতুন মেসো লেখক মানুষ। গল্পটি পড়ে মেসোমশাই মন্তব্য করেছিলেন যে, তপনের গল্প দিব্যি হয়েছে। একটু কারেকশান করে দিলে ছাপানো যাবে। ছোটোমাসি তখন তাই বলেছিল যে, তপনের গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়াই তাঁর উপযুক্ত কাজ হবে। মেসোমশাই বড়ো মুখ করে বলেছিলেন যে, ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদককে বললে তিনি ‘না’ করতে পারবেন না, ছাপানোর ব্যবস্থা করে দেবেন। বিকেলে চায়ের টেবিলে তপনের গল্প ছাপানোর কথাই উঠেছিল।
  • তপনের গল্প ছাপানোর বিষয়টা নিয়ে বাড়ির সবাই হাসাহাসি করছিল। তপনকে বাড়ির লোক গুরুত্বই দিচ্ছিল না। কিন্তু নতুন মেসো বলেছিলেন ‘না – না আমি বলছি— তপনের হাত আছে। চোখও আছে। নচেৎ এই বয়সের ছেলেমেয়েরা গল্প লিখতে গেলেই তো হয় রাজারানির গল্প লেখে, নয় তো— খুন-জখম অ্যাকসিডেন্ট, অথবা না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া – এইসব মালমশলা নিয়ে বসে। তপন কিন্তু সেই দিকে যায়নি। শুধু ওর ভরতি হওয়ার দিনের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির বিষয় নিয়ে লিখেছে, এটা খুব ভালো। ওর হবে।’ তপন মেসোমশাইয়ের কথা শুনে বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।

১২। “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা” – বক্তা কে? বক্তা কোন্ কাজের কথা বলেছিল? বক্তার উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে মেসো কী বলেছিলেন ? ১+২+২

  • কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে আহৃত উদ্ধৃতাংশটির বক্তা তপনের ছোটোমাসি ।
  • তপন একটা গল্প লিখে প্রথমেই দিয়েছিল তার চিরকালের বন্ধু ছোটোমাসিকে। কয়েকদিন আগেই বিবাহ হয়েছে ছোটোমাসির। নতুন মেসোমশাই পেশায় কলেজের প্রফেসর কিন্তু তিনি আবার একজন প্রকৃত লেখক মানুষ। ছোটোমাসি তপনের লেখাটা হাতে পেয়েই আনন্দে মেসোর কাছে উপস্থিত হয়েছিল। তখন মেসো ছিলেন দুপুরের ঘুমের মধ্যে। মাসি মেসোমশাইয়ের ঘুম ভাঙিয়ে গল্পটি তাঁর হাতে এনে দেওয়ার জন্য হইচই ফেলে দিয়েছিল। কারণ গল্পটির মূল্য বুঝলে মেসোই বুঝবে। কথায় বলে, ‘রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।’ মাসি প্রধানত তপনের গল্পটি ছাপানোর ব্যবস্থা করার জন্য মেসোমশাইকে বলেছিলেন। এটাই ছিল উপযুক্ত কাজের কথা।
  • মেসোমশাই নতুন বিবাহ করেছেন। তপন আবার শ্বশুর বাড়ির ছেলে। মেসোমশাই গল্পটি পড়েন। তপনকে খুশি করতে বলেন, তপন তোমার গল্প দিব্যি হয়েছে। একটু ‘কারেকশান’ করে ইয়ে করে দিলে ছাপতে দেওয়া চলে।’ মেসোর কথাটা তপন ঠাট্টা বলে ভাবলেও পরে মেসোর মুখে করুণার ছাপ দেখে আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। মাসিও গল্পটি ছাপানোর জন্য অনুরোধ করেছিল। মেসো বলেন যে, তিনি গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তাঁর ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ রয়েছে, তিনি বললে সম্পাদক ‘না’ করতে পারবেন না। তপন মনে মনে খুব আনন্দিত হয়েছিল।

১৩। “তপন অবশ্য মাসির হইচইতে মনে মনে পুলকিত হয়” – উৎস লেখ। মাসির হইচই-এর কারণ কী? তপন মনে মনে পুলকিত হয়েছিল কেন? ১+৩+১

  • আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
  • তপনের ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যেই মামার বাড়িতে আসা। তখন গরমের ছুটি ছিল বলে কয়েকদিন মামা বাড়িতে থেকে যাওয়া হয়েছিল। তপনের সঙ্গে ছোটোমাসির সম্পর্কটা ছিল বন্ধুর মতো। বয়সে বছর আষ্টেকের মতো বড়ো হলেও সমবয়সির মতোই তারা আচরণ করে। ঠিক যেন চিরকালের বন্ধু। তাই তপন যে গল্পটা লিখেছিল, সেটি প্রথম বলে ছোটোমাসিকে। আবার ছোটোমাসির স্বামী কলেজের প্রফেসর হলেও লেখক মানুষ। তাঁর অনেক ছাপানো বইও রয়েছে। তাই ছোটোমাসি তপনের লেখা গল্পটি নিয়ে আনন্দে পৌঁছে গিয়েছিল মেসোর কাছে। তপন সাময়িক প্রবল আপত্তি করে ‘না-আ-আ’ বললেও মাসি তপনের কোনো কথাই শোনেনি। বরং দুপুরের ঘুম ভাঙিয়ে হইচই করে মেসোর হাতে পৌঁছে দিয়েছিল তপনের গল্পটি।
  • তপন কিশোর বয়স্ক। তার লেখা গল্প ছোটোমাসির হাত ঘুরে নতুন মেসোমশাইয়ের হাতে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রথমে তপনের মনে প্রবল আপত্তির সুর ছিল ঠিকই, সেটা তার বয়সোচিত ধর্মের জন্য। কিন্তু একজন লেখকের হাতে গল্প চলে যাওয়াটা যে ভবিষ্যতের পক্ষে খুবই আনন্দদায়ক তা বুঝতে তপনের সময় লাগেনি। তাই তার লেখা গল্প লেখক মেসোর হাতে পড়ায় মনে মনে তপন খুবই পুলকিত হয়েছিল। কারণ এতেই যে তার গল্পের মূল্যায়ন হবে। রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।’

১৪। “তবে তপনেরই বা লেখক হতে বাধা কী?” – উদ্ধৃতিটির উৎস কী ? তপনের মনে এরূপ ভাবনার কারণ কী ? ১ + ৪

  • বাংলাসাহিত্যের অন্যতম কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি আহৃত।
  • তপন কোনোদিন কোনো লেখককে দেখেনি বা লেখকদের যে দেখা যায় তাও জানতই না। সে কোনোদিন ভাবতেও পারেনি যে লেখকরা তার বাবা, কাকা, মামাদের মতো মানুষ; লেখক সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তার মনের সমস্ত ভুল, অস্পষ্টতা দূর হল নতুন ছোটো মেসোমশাইকে দেখে। কদিন আগে ছোটোমাসির বিবাহ হয়েছে কলেজের প্রফেসর তথা অনেক গ্রন্থের প্রণেতা এক লেখকের সঙ্গে। তাঁকে দেখেই তপন বোঝে বা জানতে দেখে পারে যে, লেখকরা একেবারে নিছক মানুষ তাঁরাও সাধারণ মানুষের মতো দাড়ি কামান, সিগারেট খান, চান করেন বা ঘুমান। শুধু তাই না তাঁরাও খবরের কাগজের সমস্ত কথা নিয়ে গল্প করেন, তর্ক করেন, সিনেমা দেখেন, বেড়াতে বেরোন। কোনো কিছুই সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা নয়।
  • তপনের মনের সমস্ত অন্ধকার, অজানা বিষয় লেখকদের সম্পর্কে যা ছিল সবই দূরীভূত হয়। সে এখন জলজ্যান্ত একজন লেখককে অহরহ দেখতে পাচ্ছে। সে বুঝেছে লেখকরা আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নয়। বরং তাঁরা সাধারণ নিছক মানুষই। তাই তপনের মনে হয়েছে সেও তো একজন লেখক হয়ে উঠতে পারে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তপনের মনের এরূপ ভাবনা

১৫। “নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের” – উৎস লেখো। উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৫

  • আলোচ্য অংশটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে উদ্ধৃত।
  • তপন ছেলেবেলা থেকে রাশি রাশি গল্প শুনেছে। তার গল্প শোনার একটা নেশা রয়েছে। এখন সে কিশোর হয়েও অনেক গল্প পড়ছে। তাই গল্প জিনিসটা যে কী; তা সে জানত। কিন্তু তার মনে একটা অজানার জায়গা ছিল। সে গল্পের যাঁরা রূপকার, তাঁদের সম্পর্কে জানতো না। তাঁদের আদৌ দেখা যায় কিনা, তাঁরা কেমন? সে কিছুই জানত না। এমনকি লেখকরা তার বাবা, ছোটোমামা, মেজোকাকুর মতো মানুষ কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ ছিল।
  • একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তপনের সমস্ত ধারণা পালটে যায়। কদিন আগে তপনের ছোটোমাসির বিবাহ সম্পন্ন হয়। নতুন মেসোমশাই কলেজের প্রফেসর। তিনি আবার একজন লেখক। তাঁর অনেক ছাপানো বই রয়েছে। তপন এই প্রথম এত কাছ থেকে জলজ্যান্ত একজন লেখককে দেখল। আর এই দেখার মধ্যে দিয়ে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল। সে দেখল এক আশ্চর্য ঘটনা। ‘কোনো উলটোপালটা নেই, অন্য রকম নেই, একেবারে নিছক মানুষ!’ লেখকরাও তাদের মতো দাড়ি কামান, সিগারেট খান, খেতে বসেই ‘আরে ব্যস্, এত কখনো খাওয়া যায়?’ বলে অর্ধেক তুলে দেন। চানের সময় চান করেন এবং ঘুমের সময় ঘুমোন। তাছাড়া, তাঁরাও ‘ছোটোমামাদের মতো খবরের কাগজের সব কথা নিয়ে প্রবলভাবে গল্প করেন, তর্ক করেন, আর শেষ পর্যন্ত ‘এদেশের কিছু হবে না’ বলে সিনেমা দেখতে চলে যান, কী বেড়াতে বেরোন সোজাসুজি। লেখকদের সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পেয়েই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল অর্থাৎ তপনের অন্তদর্শন ঘটেছিল।

১৬। “কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল” • উদ্ধৃতিটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কোন্ কথা শুনে তপনের   এরুপ অবস্থা হয়েছিল এবং কেন? ১ + ৪

  • কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
  • তপন তার সমবয়সি ছেলেদের থেকে একটু আলাদা। গল্প শুনতে ভালোবাসে, গল্প পড়তে ভালোবাসে আবার মনের টানে অনুভূতি দিয়ে গল্প লিখেও ফেলে। ছেলেবেলা থেকে সে রাশি রাশি গল্প শুনেছে, এখন সে অনেক গল্প পড়ছে, গল্প বিষয়টা কী তা সে জেনেছে। কিন্তু গল্প যাঁরা লেখেন অর্থাৎ লেখক সম্পর্কে তপনের কোনো ধারণা ছিল না। তপনের মনে হয়েছিল লেখকরা অন্য কোনো ধরনের মানুষ। সে তো কোনোদিন কোনো লেখককে দেখেনি, বা তার সঙ্গে পরিচয়ও ঘটেনি ৷
  • তপনের জীবনে লেখক সম্পর্কে যে ধারণা ছিল তা পালটে যায়। তপনের ছোটোমাসির কয়েকদিন আগে বিবাহ হয়েছিল। নতুন ছোটো মেসোমশাই কলেজের প্রফেসর। কিন্তু তাঁর আরও একটি গুণ ছিল। তিনি ছিলেন লেখক। তপন মেসোমশাইয়ের বই লেখার কথা শুনে অবাক হয়। মেসোমশাইয়ের অনেক বই ছাপা হয়ে গ্রন্থের আকারে প্রকাশও পেয়েছে। ‘তার মানে তপনের নতুন মেসোমশাই একজন লেখক ৷ সত্যিকার লেখক।’ লেখককে যে জলজ্যান্ত চোখের সামনে দেখা যায়, তা তপন জানত না। শুধু তাই নয়, লেখকরা যে তপনের বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতো মানুষ এ বিষয়ে সন্দেহ ছিল, তাই নতুন ছোটো মেসোমশাইকে দেখে তপনের এরূপ অবস্থা হয়েছিল এবং তার চোখ মার্বেল হয়ে গিয়েছিল বিস্ময়ে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!